শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৩০ পূর্বাহ্ন

৪ চাকার পিঠে চলছে রুহুল আমীনের ১৯ বছরের জীবন

৪ চাকার পিঠে চলছে রুহুল আমীনের ১৯ বছরের জীবন

স্বদেশ ডেস্ক:

মানুষের হাঁটা চলার জন্য প্রয়োজন দু‘টি পা। এটাই যদি না থাকে তাহলে কোনো মানুষের বাঁচা আর মরা সমান কথা। তেমনি এক ব্যক্তি মো: রুহুল আমীন (৭০)। তিনি দু‘টি পা হারিয়েছেন ২০০৩ সালে কোনো এক অজানা অসুখে।

আজ প্রায় ১৯ বছর, পাবিহীন অবস্থায় চলছে তার জীবন। চলা-ফেরার সাহায্য করার জন্য তার নেই কোনো সন্তানাদি। বাইরে চলাচলের জন্য সম্বল হিসেবে আছে তার লোহার বেয়ারিং দিয়ে তৈরি একটি গাড়ি। চার কোণা বিশিষ্ট গাড়িটিতে চাকা হিসেবে রয়েছে চারটি বেয়ারিং। উপরে মাচা হিসেবে আছে কাঠের তক্তা। এই গাড়িটিতে চলার জন্য নেই কোনো ইঞ্জিন। তক্তার মাচার উপরে বসে দু‘হাতের উপর ভর করে সামনের দিকে ঠেলে দিলেই চলতে থাকে গাড়িটি। আর এ ভাবেই দু‘হাতের উপর ভর করেই রুহুল আমীন তার জীবন চাকার গাড়িটি চালিয়ে নিচ্ছেন দীর্ঘ ১৯ বছর।

মো: রুহুল আমীন (৭০) মধুপুর উপজেলার কুড়ালিয়া ইউনিয়নের গঙ্গাহরী গ্রামের মৃত হযরত আলীর ছেলে। কোনো সন্তানাদি না থাকায় স্ত্রীকে নিয়েই তার সংসার।

রুহুল আমীন জানান, তিনি ২০০৩ সালে হঠাৎ এক দিন তার পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লাল হয়ে ফোসকা দেখা দেয় এবং জ্বালাপোড়া করতে থাকে। তার জন্য অ্যালোপ্যাথিক ও কবিরাজি চিকিৎসা শুরু করেন। কিন্তু দিন যত যেতে থাকে তার গায়ের ও পায়ের ফোসকা দগ-দগে ঘায়ে পরিণত হতে থাকে।

আর একপর্যায়ে পায়ের ঘা সেপটিক আকারে পরিণত হলে ডাক্তারের পরামর্শে দুটি পা কেটে ফেলে দেন। আর সেই থেকে টগবগে যুবক রুহুল আমীনের পঙ্গুত্ব জীবন। বিবাহিত জীবনে সংসারে কোনো সন্তান না থাকায় রোজগারের ব্যক্তি তিনি নিজেই। চলাফেরার জন্য গত ১৯ বছর ধরে এ চারচাকার বেয়ারিংয়ের গাড়ির উপর নির্ভর করেই চলছে তার জীবন। দু‘পাবিহীন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিটি সরকারি সহায়তা হিসেবে পান শুধু প্রতিবন্ধী ভাতা। বাড়িতে থাকার জন্য রয়েছে ২৫ বছরের পুরনো বাবার দেয়া জরাজীর্ণ ভাঙ্গা একটি ঘর।

তিনি বলেন, যদি সরকারি সহায়তার কোনো ঘর পেতাম তাহলে থাকার জন্য সুবিধা হতো।

তেমন জমি-জমা না থাকায় মধুপুর উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে ঘুরে-ঘুরে বিভিন্ন দোকান থেকে টাকা তোলেন রুহুল আমীন। আর তা দিয়েই সংসারের খরচ মিটান।

কথা প্রসঙ্গে তিনি লোকজনদেরকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেন, কোনো ব্যক্তির কাছে হাত পাতলে কেউ আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না । তাই আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আল্লাহর কাছেও কৃতজ্ঞ কেন না আল্লাহ শুধু আমার পা দুটোই নিয়েছেন হাত আর নেননি। হাত আছে বলেই আজ আপনাদের কাছে আসতে পারছি। ও দুটো না থাকলে তো তাও পারতাম না।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877